ষোল কোটি মানুষের এ দেশে বহু শিক্ষিত যুবক বেকার, অধিকন্তু বহু শিক্ষার্থী কোন প্রকার যোগ্যতা অর্জনের আগেই ঝড়ে যায়। আমরা আর তা হতে দিতে পারিনা। সময় এসেছে সিদ্ধান্ত নেবার, আগামী প্রজন্মকে আমরা কিরূপ দেখতে চাই? লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার, নাকি দক্ষ কর্মক্ষম জনশক্তি? প্রতিটি শিক্ষার্থীকে অন্তত একটি কর্মোপযোগী দক্ষতা দিতে পারলে, তবেই আমরা দেশের অবস্থা বদলাতে পারব। এ জন্য কারিগরি শিক্ষায় তাকে আকৃষ্ট করতে হবে, শিক্ষাকে করতে হবে আনন্দময়। কারিগরি শিক্ষায় এর সুযোগ অনেক বেশী, আমাদেরকে তা কাজে লাগাতে হবে।
শুধুমাত্র অ, আ, ক, খ অথবা A, B, C, D শিখলেই মানুষ হওয়া যাবে না। প্রয়োজন মানবিক গুনাবলীর। যেমন- ন্যায়বোধ, কর্তব্যবোধ, শৃংখলা, শিষ্টাচার,অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি, মানবাধিকার, সহাবস্থান, সৌহার্দ, অধ্যবসায় ইত্যাদি সহ বিজ্ঞান মনস্ক, কুসংস্কার মুক্ত মানসিকতা - এ দায়িত্ব ও আমাদের নিতে হবে। বিশ্বায়নের এ যুগে দক্ষ মানুষের বিশাল চাহিদা। আমাদের মানুষ আছে, কিন্তু দক্ষতা না থাকায় লাখ-লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ গিয়ে অমানবিক পরিশ্রম করে বেতন পায় দশ হাজার টাকা, আর পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, কোরিয়া, সিঙ্গাপুরের লোকেরা দক্ষতার কারনে আরামের চাকরি করে বেতন পায় লাখ টাকা। আমাদের অদক্ষতার সুযোগে বহু সংখ্যক বিদেশিও এদেশে চাকরি করে মোটা অংকের বেতন নিয়ে যায়। আমরা কি শুধুই চেয়ে চেয়ে দেখব ?
আসুন আমরা দেরীতে হলেও কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দেই, আমাদের অবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে আগামী প্রজন্মকে গড়ে তুলি প্রতিযোগিতামুলক বিশ্ব-বাজারের উপযোগি দক্ষ ও কর্মক্ষম জনশক্তি হিসেবে, ভিশন ২০২১-এর কর্মী হিসেবে।
কয়েক বছর পূর্বেও ভাবা হত অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী এবং নিন্মবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরাই শুধু কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় যায়, যাতে তারা শিক্ষা শেষেই কোন না কোন ছোট চাকুরিগুলোতে ঢুকতে পারে। এই ধারণা যে এখনও নেই তা নয়। কারন বেশিরভাগ সময় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে যারা ভর্তি হয়, তাদের অনেকেই হয় অন্য কোথাও সুযোগ পায়না বা আর্থিক সমস্যার কারণে বা নানা ধরনের সীমাবদ্ধতার কারণে এই বিভাগে ভর্তি হয়।
তবে সময় এক থাকে না। সময়ের সাথে ও পারিপার্শ্বিক প্রয়োজনে এখন মানুষের চিন্তাও পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষ পঠিত পুস্তক এর পাশাপাশি হাতে কলমে শিক্ষার দিক যাচ্ছেন যাতে বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে বেকার থাকতে না হয়। আর সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো কেও ঢেলে নতুন করে সাজিয়েছেন। আর সে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি হলো কালিয়া সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ।
স্বাধীনত পরবর্তী সময়ে ১৯৮৪ সালে দক্ষ কারিগরি নাগরিক গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাত্র দুইটি বিষয়ে বেসিক কোর্স তিন মাস এবং ছয় মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য মাগুরা ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনিস্টিউট স্থাপন করা হয়। পরবর্তিতে ১৯৯৭ সালে কারিগরি শিক্ষা মান উন্নয়নের লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠানে এসএসসি (ভোকেশনাল) পাঠদান কার্যক্রম চালু হয়। ২০০১ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মাগুরা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ। তখন থেকে আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে এসএসসি (ভোক) এবং এইচএসসি (ভোক) শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সর্বশেষ সংকলন হিসেবে ২০১৬ সাল থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এবং ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ হতে প্রি ভোকেশনাল- ৬ষ্ঠ,৭ম ও ৮ম শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।
এখানে রয়েছেন এক দল সুদক্ষ শিক্ষক যারা দিন রাত তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিশ্রম করছেন।
এটি এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ রাখা হয়। তাদেরকে যেমন সমান ভাবে প্রশিক্ষন দেয়া হয় ঠিক তেমনি প্রাতিষ্ঠানিক পোশাক পরিধানে বাধ্য করে তাদের মধ্যে ধনী গরিব ভেদাভেদও দূর করা হয়।
এই প্রতিষ্ঠানে সাভাবিক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন-রাও শিক্ষা গ্রহন করতে পারে। ফলে ভবিষ্যতে তারা যাতে জাতির জন্য ভার না হয়ে বরং সচল চাকা হতে পারে সেই নিশ্চয়তা এই কলেজ দিয়ে থাকে।
এখানে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদের কেও গুরুত্ব দেয়া হয়৷ তারা যাতে তাদের সন্তানের পড়াশোনা সম্পর্কে এবং তাদের ভবিষ্যত জীবন সম্পর্কে সচেতন থাকেন সেই দিকেও নজর রাখা হয়।
একজন শিক্ষার্থী কে শিক্ষা প্রদান এর লক্ষ্যে এই কলেজের সাথে শিক্ষার্থীর বন্ধন শুরু হলেও এই প্রতিষ্ঠান তার শিক্ষার্থীর চাকরির বাজারে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত একজন দক্ষ, সুবিবেচক ও সুচেতন অভিভাবক এর মত ভুমিকা পালন করে।
25876